বাড়িতে নার্সারির মতো গোলাপ চারা কিকরে তৈরি করবেন? বিস্তারিত জানুন প্রতিবেদনে।

অনেকেরই মধ্যে বাড়িতে বাগান করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। কাজের ফাঁকে অবসর সময়ে হোক কিম্বা শখের জন্যও বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বাগান করার পরিকল্পনা কমবেশি সকলের মধ্যেই থাকে। তবে বাগান করার কথা উঠলে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফলগাছ করার ভাবনা মাথায় আসে। আর ফুল গাছ রোপণের কথা বলতে গেলে সবার প্রথম বলতে হয় ফুলের রানি গোলাপের কথা।

   

তবে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ সমস্ত বাজার থেকে কিনে আনলে গাছ রোপণ ও বৃদ্ধির সময় বাঁচে ঠিকই তবে খরচ একটু বেশিই হয়ে যায়। আর গোলাপ চারার দাম তো সবসময় হাই থাকে। তবে আপনার হাতে যদি কিছুটা সময় থেকে থাকে এবং আপনি চারাগাছ গুলিকে বাড়িতেই তৈরি করে নিতে পারেন তবে খানিক পরিশ্রম হলেও আপনার ফুলগাছ কেনার খরচও সাশ্রয় হবে এবং আপনার শখের বাগান করার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা হাতেনাতে লাভ করতে পারবেন।

তাছাড়া শখের ফুলবাগানের দ্বারা বাড়ির সৌন্দর্য্যায়ন বৃদ্ধি করতে চাইছেন অথচ গায়েগতরে একটু পরিশ্রম না করলে বাগান করার আনন্দ উপভোগ করবেনই বা কিভাবে? নিজের হাতে পরিশ্রম করে শখের বাগানে ফুল ফোটাতে পারলে আনন্দ হয় দ্বিগুণ। আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা করবো বাড়িতেই কিভাবে নার্সারির মতো গোলাপের চারা তৈরি করবেন। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক।

আরও পড়ুন: অল্প টাকায় শুরু করুন এই ব্যবসা। আয় মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা।

গাছের কাটিং থেকে গোলাপ চারা রোপণ:-

বাড়িতে গোলাপের চারা তৈরি করার জন্য প্রথমে বড়ো গোলাপ গাছের কিছু শাখা (পুরুষ ডাল) (যেগুলিতে ফুল আসেনি) লম্বা করে কেটে নিতে হবে। এরপর ডালগুলিতে কোনো প্রশাখা বা পাতা থাকলে সেগুলিও কেটে ফেলতে হবে। এবারে খেয়াল করুন ডালগুলির দৈর্ঘ্য যাতে ১৫-২০ সেমি এর মধ্যে হয়। যদি খুব লম্বা ডাল হয় তবে মাঝ বরাবর কেটে দুই টুকরো করুন এবং লক্ষ রাখবেন প্রতিটি গোলাপ দন্ড যাতে একই দৈর্ঘ্যের হয়।

এখন একটি বড়ো টব বা টবজাতীয় পাত্রে বালি দিয়ে ভর্তি করে তাতে জল দিন। এবারে গোলাপের দন্ডগুলি ওই বালির মধ্যে ১ ইঞ্চি মতো ভেতরে প্রবেশ করিয়ে রোপণ করুন। খেয়াল রাখবেন গোলাপ দন্ডের কাঁটার মুখ যাতে নীচের দিকে থাকে। উল্টো করে রোপণ করলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। আপনার বেগার খাটনি হবে পাতা ফুল কিছুই আসবে না। আপনি চাইলে দন্ডগুলির গোড়ায় হরমোন পাউডার মাখিয়ে রোপণ করতে পারেন। এতে করে গাছের গোড়ায় তুলনামূলক বেশি শিকড় জন্মাবে।

এই হরমোন পাউডার বাজারেই কিনতে পাওয়া যায়। আপনি চাইলে প্রাকৃতিক হরমোন পাউডার (অ্যালোভেরা ও দারচিনির মিশ্রণ) তৈরি করে গোড়ায় মাখিয়ে দিতে পারেন। তবে হরমোন পাউডার ছাড়াও গাছে নতুন পাতা গজাবে তবে একটু সময় বেশি লাগতে পারে এবং শিকড়ের পরিমাণ তুলনামূলক কম হবে। এখন টবের মধ্যে রোপণ করা চারাগুলোকে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে না এমন স্থানে রেখে দেবেন। এভাবে রোপণ করা অবস্থায় ১৫ দিন থেকে ১ মাসের মধ্যে গোলাপ দন্ডগুলিতে নতুন পাতা ও ফুল গজাতে আরম্ভ করবে।

rose-plant

মাটি তৈরি ও পরিচর্যা:-

গোলাপ চারায় নতুন পাতা ও শেকড় গজালে বালি থেকে চারাগুলো তুলে নিন। এখন গোলাপ দন্ডগুলোর গোড়ায় যেখানে শেকড় গজিয়েছে সেখানে প্রত্যেকটিতে কাদামাটির মিশ্রণ ডিম্বাকারে পাকিয়ে দিন। দোআঁশ ও কাঁকরযুক্ত মাটিতে গোলাপ চাড়া ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। তাই এই দুই ধরনের মাটির মিশ্রণ তৈরি করে তা টবে বা প্যাকেটে ভরুন। টব প্যাকেটে চারাগুলি রোপণ করার সময় লক্ষ রাখুন যাতে তলার দিকে ছিদ্র থাকে। কেননা গাছের গোড়ায় বেশি জল জমলে কোনোভাবেই গাছটিকে আর বাঁচাতে পারবেন না। যদি সরাসরি ভূমিতে চারাগাছ গুলিকে রোপণ করেন তবে মিশ্রণ তৈরি করার প্রয়োজন নেই।

আরও পড়ুন: নার্সারির ব্যবসা করে প্রচুর আয় করার সুযোগ দিচ্ছে সরকার। জানুন কিভাবে।

এরপর চারাগুলিকে যেখানে সূর্যের আলো বেশি মাত্রায় পড়ে সেই স্থানে রেখে দিতে হবে। দ্বিতীয়বা চারাগুলি রোপণের পর গাছের গোড়া থেকে সামান্য দূরে হাড়গুঁড়া বা শিং কুচি সার গোল করে অল্পবিস্তর ছিটিয়ে দিতে পারেন। এই সার যেকোনো সারের দোকানেই পেয়ে যাবেন।

কলম তৈরি ও কুড়ি আগমন:-

কলম তৈরি করার জন্য পুরুষ চারাগাছ গুলির বাকলে T আকৃতির অংশ কেটে নিতে হবে। এবারে যেই গাছ গুলিতে ফুল ফোটে সেই গাছ গুলি থেকে লাল অংশের মত কুড়ি আসার স্থান থেকে চোখ কেটে নিতে হবে। সেই কেটে নেওয়া চোখ (কেবল বাকলসহ) T আকৃতির অংশে বসিয়ে প্লাস্টিক দিয়ে বেঁধে দিন। গাছে কুড়ি না আসা পর্যন্ত জল, সার ইত্যাদি দিয়ে পরিচর্যা করুন। এভাবে গাছের যত্ন নিলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে পুরুষ গাছগুলি থেকে শাখাকলম বেরিয়ে আসবে এবং কুড়ি আসতে শুরু করবে এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সুন্দর সুন্দর ফুলে ভরে যাবে আপনার বাগানের আনাচ-কানাচ।

Like Facebook Page