ফলের ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়ান। ইনকাম মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা।

বর্তমান সময়ে বেকারত্বের সংখ্যা যেভাবে বেড়েই চলেছে তাতে একপ্রকার দিশেহারা হয়ে পড়ছে যুবসমাজ। কিভাবে অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন তা বিস্তারিত আলোচনা করবো আজকের প্রতিবেদনে।

   

অনেক ভাইবোন যারা পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন কিম্বা বা লেখাপড়া ছেড়ে কাজের জন্য সন্ধান করছেন কিন্তু উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে পারেননি তাদের জন্য এই বিজনেস আইডিয়া দেওয়া হলো। আজকে আলোচনার বিষয় কিভাবে ফলের ব্যবসা করে বেকারত্ব ঘোচাবেন এবং নিজের পরিবারকে অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল করে তুলতে পারবেন।

হ্যাঁ বন্ধুরা, কোনো কাজই ছোটো নয়। সমাজে প্রতিটি কাজ করার জন্য কোনো না কোনো উদ্যোক্তা/ব্যবসায়ী/ব্যক্তির প্রয়োজন। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে প্রথমে নিজেকে ও নিজের কাজকে সন্মান করতে শিখুন। মনে রাখবেন প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর একটি কোম্পানিতে কাজ নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: মাধ্যমিক পাসে মোটা বেতনের চাকরি। আবেদন প্রক্রিয়া জানুন।

আপনার বয়স আপনার সফলতার মাপকাঠি হতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ KFC এর প্রতিষ্ঠাতা বিলিওনিয়ার হন যখন তার বয়স আশির ঘরে। তাই একটা জিনিস স্মরণে রাখবেন যেকোনো বয়সেই আপনি সফল হতে পারবেন যদি আপনার মধ্যে সদিচ্ছা ও সফল হওয়ার উদ্যম থাকে।চলুন জেনে নেওয়া যাক, ফলের ব্যবসা শুরু করার জন্য কিরকম অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, কোথা থেকে ফল কিনবেন? কত টাকা লাভ হবে, কত পুঁজি প্রয়োজন a to z আলোচনা করা হলো।

পুঁজি ও শেয়ার:-

ফলের ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমে আপনাকে ন্যূনতম ১৫-২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। প্রথমেই ত্রিশ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগ করবেন না কারণ প্রাথমিকভাবে এই ব্যবসা সম্পর্কে আপনাকে অনেক কিছু জানতে হবে। প্রথমেই কারও সাথে শেয়ারে এই ব্যবসা শুরু করার ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো।

অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে কিনা?

সব ধরনের ব্যবসা করার আগেই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা আবশ্যিক। আপনার পরিচিত যারা ফলের ব্যবসা করছেন তাদের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। তবে অনেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করে না। তাই আপনার যদি আত্মবিশ্বাস থাকে আর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চান তবে কিছু আইডিয়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করুন।

প্রথমে আপনাকে সঠিক ও তাজা ফল কেনা শিখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় পাইকারি দরে এক পেটি মাল কেনার পর অল্প সময়েই ভেতরে অনেক নষ্ট বেরোলো। কিন্তু আপনাকে তার জন্য পুরো দামই দিতে হয়েছে। এখানে দোষ ক্রেতারই কারণ আপনার উচিৎ দেখেশুনে কাঁচামাল কেনা। তাই ব্যবসা শুরুর আগে দুচারদিন বাজারে যান,পরিস্থিতি বুঝুন। প্রথমে কিছু লস হলেও কিছুদিনের মধ্যেই এই ব্যবসার রূপরেখা আপনি বুঝে যাবেন।

কোথা থেকে ফল কিনবেন?

কলকাতায় বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি দরে সমস্ত রকম ফল পেয়ে যাবেন। তবে মেছুয়া বাজার সবচেয়ে বড়ো ও পুরোনো ফলের বাজার। এখানে দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমদানিকৃত ফল ও সবজি আসে। এছাড়া বারুইপুর ফল বাজারে পেয়ারা, জামরুল ও লিচু খুব সস্তায় পেয়ে যাবেন। এখানে সিজনাল ফলই বেশি পাওয়া যায়। যেহেতু পাইকারি দরে ফল বিক্রি করা হয় তাই ব্যবসার জন্য আপনাকে কমপক্ষে ১ পেটি কিম্বা ২০-২৫ কিলো ফল নিতে হবে।

কি কি ফল নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন?

প্রাথমিকভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় ফল কলা, আপেল, আঙুর, আনারস, কমলা, আম ও তরমুজ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। পরবর্তীতে কিছু লাভ হবে বিভিন্ন রকমের ফল যেমন নাসপাতি, ডালিম, খেজুর, নারকেল ইত্যাদি যোগ করুন।

কোথায় দোকান করবেন?

ব্যাবসার শুরুতে আপনার পুঁজি যেহেতু অল্প, তাই আপনার বাড়ির কাছাকাছি মোড়ের মাথায় কিম্বা বাজারে পলিথিনের ওপর ডালি, ঝুরি কিম্বা পেটিতেই ফল সাজিয়ে ব্যবসা শুরু করুন। এতে আপনার সন্মান হানি হচ্ছে এমনটা ভাববেন না। কারণ কোনো কাজই ছোটো নয়।আর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য আপনি এই কাজ করছেন তো এটাকে সন্মান ভেবেই কাজ করুন। পরিশ্রম করলে তার ফল একদিন পাবেনই।

কত টাকা আয় হবে?

আপনি যদি দিনে ১০০ কেজি মাল বিক্রি করতে পারেন (চেষ্টা করবেন কমপক্ষে ৬০-৭০ কেজি বিক্রি করার)। এবং কেজি প্রতি ন্যূনতম ১০ টাকাও লাভ করেন (ফলের ধরণ অনুযায়ী বেশিও হতে পারে) তবে দিনে কমপক্ষে ১,০০০ টাকা এবং মাসে ত্রিশ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন। অভিজ্ঞতা ও ব্যবসা বাড়ার সাথে সাথে লাভের পরিমাণ ৫০,০০০ টাকা থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত হওয়া কোনো অসম্ভব ব্যাপার নয়। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন আপনি পারবেন।

রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ:-

ব্যবসায় ভালো পরিমাণ লাভ উঠে আসলে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিন। আপনার ব্যবসায় ধীরে ধীরে উন্নতির মুখ দেখলে আপনার শহরে বা অন্য কোথাও আয় বুঝে একটি দোকান ঘরের ব্যবস্থা করতে পারেন। আর সবজি ও ফল অনেকদিন তাজা রাখার উপায় হলো ঠান্ডাতে (এসি ঘরে) রাখা। এতে সবজি তাজা থাকে ও ফ্রেস সবজির জন্য মানুষ কিছু টাকা বেশি দিতেও রাজি থাকেন।

Like Facebook Page