অনুপ্রেরণার নাম রতন টাটা। পরোপকারী টাটার এই উপদেশগুলি মানলে সাফল্য ধরা দেবেই।

মানবিকতার নাম রতন টাটা। দেশের যেসকল ব্যক্তিত্ব সমগ্র বিশ্বে ভারত কে উচ্চাসনে নিয়ে গিয়েছেন, তাদের একজন রতন টাটা। তার বলা উপদেশমূলক বাণীগুলি আজও মানুষ জীবনে সাফল্যের সোপান হিসেবে গ্রহণ করে। আজকের আলোচ্য বিষয় রতন টাটা ও তার জীবনের কিছু খন্ড চিত্র।

   

রতন টাটা এমন একজন ব্যক্তিত্ব, জনহিতৈষী তথা সমাজ সেবক যার কথা ও জীবন কাহিনি শুনলে মন শ্রদ্ধায় ভরে আসে। ২৮ ডিসেম্বর, ১৯৩৭ তৎকালীন ব্রিটিশ বোম্বে প্রেসিডেন্সি তে জন্মগ্রহণ করেন রতন টাটা। পুরো নাম রতন নাভাল টাটা। তার পিতা নাভাল টাটা ছিলেন রতন টাটার পোষ্যপুত্র ও জেআরডি টাটা প্রপৌত্র (দত্তক নেওয়া)।

মুম্বাইয়ে Campaign School ও Cathedral John Connon School এ পড়া শেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে আর্কিটেকচার ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। এরপর হাভার্ড স্কুল ও বিজনেস থেকে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর USA তে কোম্পানিতে কিছু বছর চাকরি করেন। সেই সময় এক মার্কিন তরুণীর প্রেমে পড়েছিলেন মি: টাটা এবং দুজনে বিয়েও করবেন বলে ঠিক হয়।

আরও পড়ুন: আবেদন করুন স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপে এবং পেয়ে যান বার্ষিক ৯৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।

ঠাকুমা নভজবাই টাটা অসুস্থতার খবর শুনে দেশে ফিরে আসেন সুদর্শন যুবক টাটা। তবে ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের নিদারুণ পরিস্থিতির জন্য টাটার প্রেমিকা মার্কিন তরুণীর পরিবার তাদের মেয়েকে কখনোই ভারতে পাঠাবেন না বলে ঠিক করেন। সেই থেকে তাদের সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে আরও মেয়ের প্রেমে পড়লেও সেই সম্পর্ক কখনোই বিয়ে পর্যন্ত এগোয়নি এবং চিরকুমার থেকেছেন রতন টাটা।

এরপর পারিবারিক ব্যাবসা নিজের কাঁধে তুলে নেন রতন টাটা। দেশের বৃহত্তম কোম্পানি Tata Trust ও Tata Son’s এর সিইও হিসেবে কাজ করেছেন ২০১৭ সাল পর্যন্ত। অন্যান্য সমস্ত কাজ থেকে অবসর নিলেও টাটা সনসের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন তিনি। আজীবন সমাজসেবার কাজে নিজে ও তার কোম্পানিকে নিয়োজিত করেছেন।

বিশ্বের বৃহত্তম প্রযুক্তি পরিষেবা কোম্পানি (Tata Consultancy Services) এ বর্তমানে প্রায় ১০ লক্ষ কর্মী রয়েছেন। টাটা সর্বদা কর্মীদের জন্য উদার মানসিকতা ভাব বজায় রাখতে চেষ্টা করে চলেছে। অনেকেই মনে করেন টাটা কোম্পানি প্রতিবছর লক্ষ কোটি টাকা আয় করে তবুও বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় তাঁর নাম বেরোয় না কেন।

এমনকি ভারতের ধনী ব্যক্তিদের লিস্টেও তাঁর নাম অনেক পেছনে। এর মূল কারণ টাটা গোষ্ঠী যা আয় করে তার ৬৬ শতাংশ টাটা গ্রুপের সমাজসেবী সংস্থা টাটা ট্রাস্টের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন প্রকল্প খাতে দান করে দেয়। অবশিষ্ট অংশ থেকে কর্মীদের বেতন নির্বাহ করে টাটা গোষ্ঠী।

সাফল্যের শিখর ছুয়েও অহংকার ও মলিনতার লেশমাত্র তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। এত সম্পদের অধিকারী হয়েও কিভাবে সাধারণ জীবন যাপনের মধ্যেও অসাধারণ হয়ে ওঠা যায় তার মূর্ত প্রতীক রতন টাটা। সারাজীবনের কৃতিত্ব ও অবদানস্বরূপ পেয়েছেন দেশ-বিদেশের একাধিক সন্মান ও পুরস্কার। জনপ্রিয় পপ তারকা শিল্পী মাইকেল জ্যাকসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত প্রতিনিধি সকলেই তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন।

তাঁর আদর্শকে জীবন শৈলী করে অনেক শিল্পপতি তাঁর ভাবধারাককে অনুসরণ করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর লাখো অনুসরণকারী কিন্তু তিনি নিজে অনুসরণ করেন কেবল তার কর্মভূমি টাটা ট্রাস্ট কে। তিনি তাঁর কোম্পানিকে আজ যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। একথা বলবার জো নেই যে, যেকোনো সাফল্যের পেছনে ধৈর্য্য ও পরিশ্রম করতেই হবে। তবে যাঁরা অল্পতেই সাফল্য না পেলে হার মেনে নেন তাদের জন্য সহনশীলতার মূর্ত প্রতীক রতন টাটা। তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কারনেই বহু মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তাঁর উপদেশ মূলক বাণীগুলি আজও বহু মানুষের অনুপ্রেরণার মূলমন্ত্র। তার কিছু বাণী নীচে দেওয়া হলো।

“None can destroy iron but its own rust can!
Likewise none can destroy a person but its own mindset can!”

“I don’t believe in taking right decisions
I take decisions and then make them right.”

“Take the stones people through at you.
And use them to build a monument.”

“Never run away from your problems because
Success is always disguised in challenges.”

“If you want to walk first, walk alone.
But if you want to walk far, walk together.”

                                                       - Ratan N Tata
Like Facebook Page