করা কাজ সহজেই ভুলে যান? পড়া মনে থাকে না? রইলো স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ১০ টি উপায়।

কি কাজ করছেন একটু পরেই তা ভুলে যাচ্ছেন? আজকের পড়াশোনা আগামীকালকেই মনে থাকছে না? দিনদিন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে? সামান্য কিছু অপ্রিয় ঘটনার কারণে অল্পতেই মাথা গরম করে ফেলছেন? নিজের রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারছেন না? যদি এইসব উপসর্গ আপনার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে তবে যত শীঘ্র সম্ভব তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। উপরিউক্ত এই সমস্ত বিষয়ে সমাধানের জন্য আজকের প্রতিবেদনে কিছু বিশেষ উপায় আলোচনা করা হলো।

   

কখনো এমন হয়েছে যে বাইরে বেরোনোর সময় মানিব্যাগ খুঁজে হয়রান হয়েছেন অথচ পার্স সঙ্গে নিয়ে বেরোতেই ভুলে গেছেন। কিম্বা কোনো লকের চাবি কোথায় রেখেছেন তা প্রয়োজনের সময় মনে করতে না পেরে পরিশান হয়েছেন পরে সহজলভ্য স্থানেই তা খুঁজে পেয়েছেন। অথবা কিছুক্ষণ আগের পড়াশোনা একটু পরেই ভুলে যাচ্ছেন! দুর্বল স্মৃতিশক্তি বা আলঝাইমার্স রোগের কারণে এই ঘটনা ঘটতে পারে। নীচের উপায়গুলির মাধ্যমে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

বার্ধক্যজনিত কারণে মোটামুটি ৬০-৬৫ বছরের পরে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া কোনো অত্যাশ্চর্য ঘটনা নয়। যদিও ৩০-৩৫ বছরের পর থেকেই স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তবে খুব কমবয়সে সাধারণত Teenager দের এই ভুলো রোগে (আলঝেইমার্স) আক্রান্ত হওয়া মোটে কাম্য নয়। জীববিজ্ঞানের ভাষায় মস্তিষ্কের স্নায়ুর কোষগুলি কাজ করার ক্ষমতা হারালে এইরূপ স্মৃতিভ্রংশ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে।

আরও পড়ুনঃ তীব্র দাবদাহে বন্ধ হচ্ছে স্কুল-কলেজ। এগিয়ে এলো গরমের ছুটিও।

স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার কারণ ও প্রতিকারঃ-

পর্যাপ্ত ঘুম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক আন্তর্জাতিক হেল্থ এন্ড লাইফস্টাইল জার্নালে জানিয়েছেন, অপর্যাপ্ত ঘুম স্মৃতিশক্তির কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ। কর্মক্ষেত্র হোক কিম্বা পড়াশোনা সবেতেই মস্তিষ্কের চিন্তনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তাই একজন প্রাপ্তবয়স্কের দিনশেষে কাজের পর অন্ততপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা একটানা ঘুমের প্রয়োজন আছে। কেননা একমাত্র ঘুমের সময়ই মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ গুলি বিরাম পেয়ে সক্রিয় হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয় যাতে জাগ্রত অবস্থায় চিন্তাশক্তি বাড়াতে সহায়ক।

পরিমাণ মতো জল পান

প্রাণী মস্তিষ্কের প্রায় ৭৫ ভাগই জল। শরীরে জলের ঘাটতির জন্য যেমন কিডনি, লিভারের রোগ ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগের উদ্ভব হয় তেমনই ঘুমের সমস্যা, কাজে অমনোযোগী হওয়ার মতো একাধিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। জলের অভাবে মাথার কোষগুলি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। চিকিৎসকদের উপদেশ অনুযায়ী একজন মানুষের দৈনন্দিন ২.৫-৩ লিটার জল অবশ্যই পান করা উচিৎ। কথায় আছে জলই জীবন। তাই এই প্রচন্ড গরমে শরীরের কোষগুলোকে সিক্ত রাখতে এবং রোগমুক্ত থাকতে বেশি পরিমাণে জল পান করুন। এর ফলে আপনার মাথা ঠান্ডা থাকবে এবং মস্তিস্কের কোষ ভালোভাবে কাজ করবে যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।

পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন

লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নিয়মিত লেখাপড়ার চর্চা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে প্রভূত সাহায্য করে। পড়াশোনার অভ্যাসের দ্বারা কোনো পুরোনো বিষয়কে যেমন সহজেই মনে করা সম্ভব তেমনই পড়ার চর্চা করলে কোনো জিনিস কে বহুদিন মগজে ধরে রাখা সম্ভব যা ভালো স্মৃতিশক্তির পরিচায়ক। বিশেষত নাটকের মতো করে কিম্বা পায়চারি করে বা গ্রুপ স্টাডি ও ভিজ্যুয়াল মাধ্যমের পড়াশোনা মস্তিষ্কের কোষ সহজেই Adopt করতে পারে। তাই আপনার স্টাডি রুমটিকে পড়াশোনার চর্চার আদলে সাজিয়ে তুলুন। লাইব্রেরীতে যেতে পারেন। এতে আপনার স্মৃতিশক্তি দৃঢ় হবে।

সুষম খাদ্যাভ্যাস

খাদ্যাভ্যাস অর্থাৎ আপনি কি ধরনের খাবার খাচ্ছেন তা আপনার স্মৃতিশক্তির ওপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রসেসড ফুড, ফাস্টফুড ও চিনিজাতীয় খাবারকে না বলুন। পরিবর্তে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এমন খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন। ওমেগা থ্রি, ও ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার যেমন মাছের তেল, দুধ, কাঠবাদাম, ফলের রস ইত্যাদি আহার গ্রহণ করতে পারেন। এই খাবারগুলি প্রচুর ভিটামিন, ফ্যাট ও Omega 3 এর উৎস যা মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শরীরচর্চা

স্মরণশক্তি বাড়ানোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো Exercise করা বিশেষত মস্তিষ্কের ব্যায়াম। শীর্ষাসন, বিপরীত করনী এক মুদ্রাসন, শবাসন এই ব্যায়ামগুলি নিয়মিত করলে মস্তিষ্কের কোষগুলিতে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। ফলত, কোনো কিছু মনে রাখার ক্ষমতা দীর্ঘদিন বজায় থাকে। তাই স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে চাইলে নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

মানসিক চাপ

memory-anger

মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। গবেষণায় দেখা গেছে অত্যধিক মানসিক চাপের কারণে অল্পবয়সীদের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশ বা আলঝাইমার্স বা ভুলে যাওয়ারর রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি পরিমাণে হয়েছে। তাই অকারণ টেনশন করে মানসিক চাপ বাড়াবেন না। প্রচলিত আছে মানসিক চাপ বাড়ালে বয়স বেড়ে যায়। কোনো সমস্যা দেখা দিলে ঠান্ডা মাথায় তা সমাধানের পথ খুঁজুন। ছোটো ছোটো অপ্রিয় ঘটনায় অল্পতেই রেগে না গিয়ে মেজাজ ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন।

যোগব্যায়াম/ধ্যান

জনশ্রুতি আছে যে করো যোগ রহো নিরোগ। আপনি যদি শরীরচর্চার সাথে রোজ ৫-১০ মিনিট করে ধ্যান বা Meditation করতে পারেন তবে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অনেকটাই উপকার পেতে পারেন। ধ্যানের মাধ্যমে আপনি কোনো পুরোনো ভালো জিনিস, পড়াশোনার বিষয়, অফিসে গিয়ে কিভাবে কাজ করবেন, চাকরির জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নেবেন ইত্যাদি বিষয়ে যোগসাধনা করতে পারেন আপনার আপনার ভুলে যাওয়া রোগ খুব তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে। তাছাড়া ধ্যানের মাধ্যমে আপনি আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজের রাগের ওপরও নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ পপুলেশন স্টাডিজ কি? কোথায় পড়ানো হয়? কর্মসংস্থানের সুযোগ কতটা?

রুটিন করে কাজ করুন

আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সমস্ত কাজকর্ম যদি একটি রুটিনের মধ্যে বেঁধে ফেলতে পারেন তবে আপনার করা কাজ খুব সহজেই মনে রাখতে পারবেন এবং আপনার স্মৃতিশক্তিরও উন্নতি হবে। যেমন রুটিন করে পড়তে বসলে পড়াশোনাকে সহজেই আয়ত্তের মধ্যে আনা যায়। প্রাচীনকালে ঋষি মুনিরা সমস্ত কাজকর্ম কঠোর নিয়মের মধ্যে পালন করতেন তাইতো তারা অনেক কিছু সঠিক অনুমান করতে পারতেন যা একটি ভালো স্মৃতিশক্তির পরিচায়ক।

মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায় এমন খেলা

কথায় আছে, গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল অনেক কাছে পৌঁছে দেবে ঈশ্বরের। ক্রীড়া শরীরের সার্বিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা এখানে মস্তিষ্কের ক্রীড়া বা মাইন্ড গেমের কথা বলবো যা মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে। যেমন- দাবা বা শব্দছক মেলানো খলতে পারেন। এতে আপনার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। পাশাপাশি পূর্বে শেখা স্মৃতিশক্তির ওপর দারুণ প্রভাব পড়বে যা আপনার স্মরণশক্তি মজবুত করতে সাহায্য করবে।

নতুন কিছু শিখুন

প্রত্যেকদিন পুরোনো জিনিস (একই জিনিস) পুনরাবৃত্তির পাশাপাশি শেখার অভ্যাসে নতুন কিছু যোগ করুন। নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন অথবা পুরোনো বিষয়কে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করার প্রয়াস করুন। এতে একদিকে যেমন নতুন কিছু শিখতে পারবেন তেমনি পুরোনো জিনিস নতুন আঙ্গিকে চর্চার মাধ্যমে আগের বিষয়টি মনে রাখার ক্ষমতা বাড়বে। এইভাবে উপরের এই ১০ টি উপায় অবলম্বন করে আপনার ভুলো রোগ বা দুর্বল স্মৃতিশক্তি সমস্যা দূর করতে পারবেন।

Like Facebook Page