যেসকল পড়ুয়া উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য স্কলারশিপের খোঁজ করছেন তাদের জন্য সুখবর। এই স্কলারশিপগুলির সাহায্যে আপনি স্নাতক, স্নাতকোত্তর, পিএইচডি ও ডিপ্লোমা ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারবেন। শুধু ইউনিভার্সিটির টিউশন ফিই নয়, এই বৃত্তিগুলির মাধ্যমে, থাকা-খাওয়া সহ স্বাস্থ্য-বীমা, প্লেনের ট্র্যাভেল টিকিট ছাড়াও একাধিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যাবেন ছাত্র-ছাত্রীরা।
আজ আলোচনা করবো ভারতীয় পড়ুয়াদের জন্য টপ ৫ স্কলারশিপ সম্বন্ধে যেগুলিতে নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনকে সফলতার শিখরে নিয়ে যেতে পারবেন। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক। এই স্কলারশিপ গুলি সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে জানিয়ে রাখি, এগুলি সবই সরকার প্রদত্ত আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ। তাই এই স্কলারশিপ পেলে আপনাকে সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে লেখাপড়া শেষ করতে হবে। তবে পড়াশোনার সাথে সাথে অন্য দেশে গিয়ে ঘোরা, থাকা-খাওয়া, সর্বোপরি একটি সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে গিয়ে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া, রোমাঞ্চকতার সঙ্গে নতুন সংস্কৃতি, আদব-কায়দা সম্বন্ধে যদি জানতে পারা যায় তবে এর থেকে ভালো আর কিই বা হতে পারে।
চলুন তবে এক এক করে জেনে নেওয়া যাক। শেষ থেকে শুরু করা যাক!
আরও পড়ুন: উত্তর পূর্ব ভারতের ১৫ টি দর্শনীয় ভ্রমণ স্থান। মন ভালো করার ঠিকানা ঘুরে আসুন স্বর্গরাজ্য থেকে।
৫) মেক্সট স্কলারশিপ
৫ নম্বরে রযেছে মেক্সট স্কলারশিপ। ভারত সহ অন্যান্য দেশের আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের পড়াশোনার জন্য প্রতি বছর এই স্কলারশিপের জন্য অফার করে থাকে জাপান সরকার। মোট ১৮ টি বিভিন্ন কোর্সে পড়ার সুযোগ পেয়ে যাবেন শিক্ষার্থীরা। থাকা-খাওয়া, পড়াশোনার খরচ সহ মেইনটেইনেন্স চার্জের জন্য ১ লাখ ১৭ হাজার ইয়েন পেয়ে যাবেন স্টুডেন্টরা। এছাড়াও মেডিক্যাল অ্যালাওয়েন্স ও ইন্ডিয়া-জাপান রাউন্ড প্লেনের টিকিটের সুবিধা প্রদান করা হবে ফান্ডিং থেকে।
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সের জন্য আবেদনকারীর বয়স ১৭-৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সের ক্ষেত্রেও বয়সসীমা ৩৫ বছর। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে পড়াশোনার জন্য আপনাকে ইংরেজি অথবা জাপানিজ ভাষা জানা আবশ্যক। তবে IELTS বা TOEFL আবশ্যক নয়। আপনার ভালো একাডেমিক রেকর্ড থাকতে হবে। স্নাতক কোর্সে আবেদনের জন্য ১০+২ স্তরে কমপক্ষে ৬৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে থাকতে হবে। টিচার ট্রেইনিং কোর্সের জন্য ভারতে পাঁচ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আবেদনের জন্য ভারতের অবস্থিত জাপানিজ এমবাসিতে গিয়ে অথবা নির্দিষ্ট কিছু শহরে অবস্থিত জাপানিজ কনসুলেটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন।
৪) গ্লোবাল কোরিয়া স্কলারশিপ
চার নম্বরে রয়েছে গ্লোবাল কোরিয়া স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। এটি সাউথ কোরিয়া সরকার প্রদত্ত সেদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভারত তথা বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিদ্যার্থীদের দেয় একটি Fully Funded International Government Scholarship। যেহেতু এটি একটি মেধা ভিত্তিক স্কলারশিপ তাই আপনার ভালো অ্যাকাডেমিক স্কোর (কমপক্ষে ৮০%) থাকতে হবে। স্নাতক স্তরের জন্য ২৫ বছর এবং স্নাতকোত্তর স্তরের জন্য ৪০ বছরের মধ্যে আবেদনকারীর বয়স হতে হবে।
কোর্স অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচের জন্য প্রতিমাসে ৫ মিলিয়ন কোরিয়ান মন সহ, ফুড ও লজিং এর জন্য ৯০ হাজার মন প্রতিমাসে পেয়ে যাবেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এছাড়াও ইন্ডিয়া-কোরিয়া ইকনমিক ক্লাসের টিকিট পেয়ে যাবেন। ডিগ্রি শেষ করার পর এক্সট্রা ১ লাখ কোরিয়ান মন দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের। আপনি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অথবা ভারতে অবস্থিত কোরিয়ান দূতাবাসে গিয়ে প্রয়োজনীয় নথি সহযোগে আবেদন করতে পারবেন। স্নাতক কোর্সের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এবং স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য ফেব্রুয়ারী-মার্চ নাগাদ আবেদন প্রক্রিয়া চলে। নির্বাচিত হলে ইমেইল মারফত জানতে পারবেন। পড়াশোনার জন্য স্টুডেন্ট বা B2 ভিসা পেয়ে যাবেন।
৩) হেনরিচ বোল স্টিফটাং
তিন নম্বরে রযেছে জার্মানির দ্য গ্রিন পলিটিক্যাল ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রদত্ত HEINRICH BOLL STIFTUNG বৃত্তি প্রোগ্রাম। জার্মানির সর্বোচ্চ ফান্ডিং স্কলারশিপগুলির মধ্যে একটি। জার্মানিতে বসবাস করা অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় এই স্কলারশিপের মাধ্যমে নির্বাচিত পড়ুয়াদের টিউশন ফি, থাকা-খাওয়ার জন্য প্রচুর অর্থ প্রদান করা হয় এই সংস্থার পক্ষ থেকে। এছাড়াও হেল্থ ইনস্যুরেন্স, প্লেন ভাড়া, অভিভাবক-সন্তানদের সাক্ষাতের জন্যও অ্যালাওয়েন্স দেওয়া হয়। এই স্কলারশিপের দরুন জার্মানির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে UG, PG ও Ph.D কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন।
পৃথিবীর সমস্ত দেশ থেকে ভালো একাডেমিক স্কোরের ছাত্র ছাত্রীরা যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন কোর্সে আবেদন করতে পারবেন। স্প্রিং সেশনে মার্চ মাসে এবং অটাম সেশনে অক্টোবর মাসে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। প্রতিবছর প্রাথমিক ভিত্তিতে জানুয়ারীতে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিত হলে এপ্রিল মাস নাগাদ কনফার্মেশন মেইল পেয়ে যাবেন।
২) রিচ অক্সফোর্ড স্কলারশিপ
২ নম্বরে রয়েছে রিচ অক্সফোর্ড স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে বিভিন্ন বিষয়ে (মেডিক্যাল বাদে) পড়াশোনার ক্ষেত্রে ৩-৪ বছরের জন্য এই বৃত্তি পেয়ে থাকেন আন্তর্জাতিক পড়ুয়ারা। সুবিধা হিসেবে পড়াশোনার ফান্ডিং, ফুড এন্ড লজিং এবং বছরে একবার এয়ার টিকিট পেয়ে যাবেন।
কেবল ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, নাইজেরিয়া সহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের প্রার্থীরাই এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ট্রান্সফার কোর্সের স্টুডেন্ট নেওয়া হয় না। এই স্কলারশিপের মাধ্যমে নতুন কোর্সে ভর্তি হতে ইচ্ছুক কেবল ফ্রেস ক্যান্ডিডেটরাই আবেদন করতে পারবেন। অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে কিন্তু মেধাবী এমন পড়ুয়ারা এই বৃত্তিতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়ে থাকেন। প্রতি বছর অক্টোবর মাস নাগাদ মোটামুটি আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।
১) ফুলব্রাইট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম
ভারতীয় পড়ুয়াদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কলারশিপ হলো FULBRIGHT SCHOLARSHIP PROGRAMME। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা কর্তৃক আমেরিকার নির্ধারিত কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাস্টার্স ও গবেষণা স্তরে পড়াশোনার জন্য আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের এই বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। ভারত সহ বিশ্বের প্রায় ১৫০ দেশের ছাত্র ছাত্রীরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
থাকা খাওয়া, মেডিকেল অ্যালাওয়েন্স পড়াশোনার খরচ সহ প্লেন ভাড়া সমস্তটাই বহন করা হবে ফুলব্রাইট সংস্থার তরফে। এই বৃত্তি পাওয়ার জন্য TOEFL আবশ্যক নয় তবে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে। ভালো একাডেমিক রেকর্ড থাকতে হবে। এই স্কলারশিপে আবেদনের জন্য ভারতীয় পড়ুয়াদের নতুন দিল্লীতে অবস্থিত আমেরিকান দূতাবাসে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। উপযুক্ত নথি সহ সেখানেই আবেদন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পারবেন। অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়েও আবেদন করতে পারবেন। আপডেটেড থাকার জন্য চোখ রাখুন usief.org.in অথবা foreign.fulbrightonline.org এই ওয়েবসাইটে। বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হলে কনফার্মেশন মেইল পেয়ে যাবেন।
উপরের সমস্ত স্কলারশিপের ক্ষেত্রে আবেদনের সময় আবেদনকারীর বৈধ পাসপোর্ট থাকা বাঞ্ছনীয়। এবং যে শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হতে চাইছেন তার আগের বছরই সংশ্লিষ্ট কোর্সের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মাধ্যমে আবেদন করতে ডেডলাইনের পূর্বে।