উত্তর পূর্ব ভারতের ১৫ টি দর্শনীয় ভ্রমণ স্থান। মন ভালো করার ঠিকানা ঘুরে আসুন স্বর্গরাজ্য থেকে।

বলা হয় উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে যে সৌন্দর্য আছে তা আর ভারতের কোথাও নেই। কাশ্মীরকে ভারতের স্বর্গরাজ্য (উচ্চতা ও সৌন্দর্যের নিরিখে) বলা হয় ঠিকই তবে উত্তর পূর্ব ভারতের ভ্রমণ স্থান গুলির একটা আলাদাই সৌন্দর্যের মাত্রা আছে। কি সুন্দর অভূতপূর্ব মহিমা তাঁর। এঁর অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যে একবার মোহিত হয়েছে বারেবারে এই পাহাড়ের কোলে ফিরে আসতে চাই। শুধু চোখ জুড়ানো উপভোগ নয়, এ যেন এক মানসিক শান্তি। কি একবার ঘুরে আসবেন নাকি উত্তর পূর্বের এই প্রদেশ থেকে।

   

আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা করতে চলেছি উত্তর পূর্ব ভারতের সেইসব দর্শনীয় ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে যেখানে নিরিবিলি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক, লৌকিক পরিবেশের মেলবন্ধন ঘটেছে অবলীলায়, অকাতরে, স্বমহিমায়। এখানকার পরিবেশ আপনাকে এতটাই মুগ্ধ করবে যেন মনে হবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এখানে কাটিয়ে দেওয়া যায়। চলুন আর দেরি না করে সেই সকল ট্যুরিস্ট স্থানগুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

আগরতলা

ujjayanta

ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা। এঁকে বীর বিক্রম মাণিক্য বাহাদুর এর ভূমি শহর নামেও আখ্যায়িত করা হয়। এই শহর এখানকার প্রাসাদ, বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প ও টেরাকোটা শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ। কখনো আগরতলা এলে নীরমহল প্যালেস, উজ্জয়ন্ত প্যালেস, জম্পুই পাহাড়, জগন্নাথ মন্দির সেপাহিজলা ওয়াইল্ড লাইফ স্যান্কচুয়ারী অবশ্যই ঘুরে যাবেন। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই শহরের আবহাওয়া বেড়ানোর জন্য খুবই উপযোগী। কাছাকাছি রেলওয়ে স্টেশন আগরতলা। নিকটতম এয়ারপোর্ট বীর বিত্রম অন্তর্দেশীয় এয়ার্পোট।

আরও পড়ুন: বাড়িতে বসেই অনলাইনে ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করুন খুব সহজেই। আবেদন পদ্ধতি জানুন।

কোহিমা

kohima

নাগাল্যান্ডের রাজধানী শহর কোহিমা। স্থানীয় ভাষায় বড়ো বস্তিও বলা হয়ে থাকে। এই দর্শনীয় স্থানে বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির পাখিদের বসবাস রয়েছে। এখানকার জনজীবন ভারতের অন্যান্য শহরগুলোর তুলনায় খানিকটা স্তব্ধ প্রকৃতির। এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলি হলো কোহিমা জু, তৌফেমা গ্রাম, জফু শৃঙ্গ, জুকো ভ্যালি ও কোহিমা মিউজিয়াম। এখানে ঘুরতে আসার উপযুক্ত সময় অক্টোবর-মে মাস। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন ডিমাপুর ও এয়ারপোর্ট ডিমাপুর।

ইম্ফল

imphal

মনিপুর রাজ্যের রাজধানী ও প্রধান শহর ইম্ফল। এঁকে মনিপুরের সংগ্রহালয় ও সাংস্কৃতিক শহরও বলা হয়ে থাকে। এই শহরে রয়েছে একাধিক ঐতিহাসিক সৌধ। থারন গুহা, কাংলা প্যালেস, লোকটাক হ্রদ, শহীদ মিনার এখানকার প্রধান ভ্রমণ স্থান। আধুনিক ভারতের স্মার্ট সিটি প্রজেক্টের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার এই শহরের দ্রুত সম্প্রসারণ হয়ে চলেছে। কাছাকাছি রেলওয়ে স্টেশন ডিমাপুর। সেপ্টেম্বর-এপ্রিল মাস এই স্থান ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। প্লেনে এলে ইম্ফল এয়ারপোর্টেও নামতে পারেন।

মাজুলি

majuli

ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি নদী দ্বীপকে কেন্দ্র করে এই শহর গড়ে উঠেছে। একে বলা হয় কালচারাল ক্যাপিটাল অফ আসাম। উল্লেখ্য মাজুলি হলো ভারত তথা বিশ্বের বৃহত্তম নদী দ্বীপ। এর উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলি হলো কমলাবাড়ি সত্র, তেঙ্গাপানিয়া, গরমুর। যোগাযোগের মাধ্যম জোড়হাট এয়ারপোর্ট এবং জোড়হাট রেলওয়ে স্টেশন। এই স্থান ঘোরার উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে মার্চ মাস।

জিরো ভ্যালি

ziro

অরুণাচল প্রদেশের অন্যতম মনোমুগ্ধকর জায়গা হলো জিরো ভ্যালি। একে Apatani Plateau ও বলা হয়। এর অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক নজারা ও ট্রেকিং এর জন্য এই স্থানটি বিখ্যাত। এর দর্শনীয় স্থানগুলি হলো ট্যালি ভ্যালি ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারী, কিলে পাখো, দোল মন্ড, মিডে প্রভৃতি। এখানে এলে নহরিগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন অথবা লীলাবাড়ী এয়ারপোর্টে নামতে হবে। মার্চ-জুন মাস জিরো ভ্যালি ভ্রমণের সবচেয়ে পারফেক্ট সময়।

পেলিং

pelling

সিকিমের অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি স্থান পেলিং। একে সিকিমের স্বর্গ বলা হয়। পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার খুব নিকটে হওয়ায় এখান থেকে স্লিপিং বুদ্ধের ভিউটা চরম হয়। এই জায়গাটি পাহাড়ের অন্যন্য শহরগুলির মতো বাণিজ্যিক ব্যস্ততা নেই বলে পরিবেশ একদমই নিরিবিলি। পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান হলো কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস, রিম্বি ফলস, কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক, খেচেওপালরি লেক। কাছাকাছি রেলওয়ে স্টেশন NJP Railway Station, নিকটতম এয়ারপোর্ট প্যাকং, বাগডোগড়া এয়ারপোর্ট। মার্চ থেকে মে মাস পেলিং ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

তাওয়াং

tawang

অরুনাচল প্রদেশের সীমান্ত শহর তাওয়াং ষষ্ঠ দলাই লামার জন্মস্থান ও ট্রেকি এর জন্য বিখ্যাত। এছাড়া বৌদ্ধ ধর্মের পীঠস্থান হিসেবেও এর খ্যাতি রয়েছে। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলি হলো তাওয়াং মনেস্টারি, বুমলা পাস ও নুরনাং ফলস। তেজপুর/গৌহাটি এয়ারপোর্ট কিম্বা রাঙ্গাপাড়া জাকশন স্টেশনে নেমে এখানে আসতে পারেন। মার্চ থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে এলে এখানকার পরিবেশ দারুণ উপভোগ করতে পারবেন।

গ্যাংটক

gangtok

পূর্ব হিমালয়ান রেঞ্জের শিবালিক পাহাড়ের ওপর অবস্থিত সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক যা Land of Monasteries নামেও বিখ্যাত। এই পাহাড়ি শহরই হলো সিকিম রাজ্যের সবচেয়ে জনবহুল, ও মুখ্য পর্যটন কেন্দ্রীক শহর যেখানে সাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি। গ্যাংটক হিল স্টেশন হওয়ার পাশাপাশি, ফটোগ্রাফার, ট্রেকিং, প্রকৃতি প্রেমীদের অন্যতম পছন্দের জায়গা। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্থানগুলি হলো হনুমান টক, নাথুলা পাস, সংমো লেক, এম জি রোড প্রমুখ। কাছাকাছি রেলওয়ে স্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশন। কাছাকাছি এয়ারপোর্ট প্যাকং অথবা বাগডোগড়া এয়ারপোর্ট। সেপ্টেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে এখানে ঘুরতে আসতে পারেন।

চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরাম

cherapunji

মেঘালয়ের জগৎ জোড়া বিখ্যাত শহরদ্বয় চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরাম। পাহাড়ি পথে দুই শহরের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৮০ কিমি। চেরাপুঞ্জি কমলালেবু এবং মৌসিনরাম (খাসি পাহাড়ের পূর্ব ঢালে অবস্থিত) পৃথিবীর সর্বাধিক বর্ষণসিক্ত স্থানের জন্য বিখ্যাত। উল্লেখ্য মৌসিনরামের পূর্বে চেরাপুঞ্জিতেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হতো। মসমাই গুহা, নোহকালিকায়, মৌনিলং ভিলেজ (ভারতের পরিস্কারতম শহর), শিলং, ডবল ডেকার লিভিং রুট ব্রিজ এখানকার দর্শনীয় স্থান। নিকটতম রেলওয়ে নেটওয়ার্ক গুয়াহাটি রেলওয়ে স্টেশন ও নিকটতম ফ্লাইট স্টেশন শিলং এয়ারপোর্ট। এখানে ঘোরা অনুকূল পরিবেশ উপভোগ করতে হলে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী এর মধ্যে আসবেন।

কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক

kaziranga

কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক আসামের কাজিরাঙ্গা তে অবস্থিত। এটি একটি অন্ত:রাস্ট্রীয় জাতীয় উদ্যান। এটি পাখিদের স্বর্গ এবং বিলুপ্তপ্রায় একশৃঙ্গ গণ্ডারের জন্য বিখ্যাত। এই পার্কে ভারতের সর্ববৃহৎ গণ্ডারের জনবসতি রয়েছে। কাজিরাঙ্গায় বেড়াতে এলে হোরনগাপর জিবন স্যাংচুয়ারী, মানস ন্যাশনাল পার্ক, ককোঝাং জলপ্রপাত এবং কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল অর্কিড এন্ড ডিভার্সিটি পার্ক অবশ্যই দেখে যাবেন। যোগাযোগের মাধ্যম জোহাট এয়ারপোর্ট এবং ফার্কাটিং জাংশন রেলওয়ে স্টেশন। এই স্থান ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময় নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস।

ডিমাপুর

dimapur

নাগাল্যান্ডে অবস্থিত ডিমাপুর উত্তর পূর্ব ভারতের এমন একটি শহর যেখানে জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। একটি বড়ো শহরে যা যা সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার সমস্ত সুবিধা উপলভ্য এখানে। এই শহরটি আকর্ষণীয় পর্যটন বিন্দু হওয়ার ভারতের সমস্ত শহরের সাথে আকাশ ও রেলপথে এর যোগাযোগ রয়েছে।

শিলং

shillong

মেঘালয়ের (মেঘালয় শব্দের অর্থ মেঘেদের রাজা) রাজধানী শিলং উত্তর পূর্ব ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। একে উত্তর পূর্ব ভারতের স্কটল্যান্ডও বলা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলং বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চলের অন্তর্গত। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় এই শহরে অবস্থিত হওয়ায় একে উত্তর পূর্ব ভারতের এডুকেশন হাবও বলা হয়। ভারতের সমস্ত বড়ো বড়ো শহরের সাথে আকাশপথে এই শহরের যোগাযোগ আছে।

আইজল

aizwal

মিজোরাম রাজ্যের রাজধানী আইজল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এক অপরূপ মোহময়ী, লাস্যময়ী শহর, যাঁর প্রেমে পড়তে আপনি বাধ্য। এই শহরের সাক্ষরতার হার প্রায় ৯৮ শতাংশ। এই শহর মিজোরামের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পীঠস্থান হওয়ার এই শহরের উন্নয়ন দ্রুত হয়ে চলেছে। এটিই এই রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র পর্যটনীয় স্থান।

গুয়াহাটি

guwahati

গুয়াহাটি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত ভারতের দ্রুত উন্নয়নশীল শহরগুলির মধ্যে একটি। এটি আসাম রাজ্যে অবস্থিত। একে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার ও বলা হয়। গৌহাটি শহরটি সড়ক, রেল ও আকাশপথে ভারতের সমস্ত বড়ো বড়ো শহরের সাথে যুক্ত রয়েছে। উত্তর পূর্বে এই শহরেই একমাত্র সবচেয়ে রেলওয়ে ডিভিশন ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। এছাড়া উত্তর পূর্ব ভারতের প্রাণকেন্দ্র এই শহরকে উত্তর পূর্ব ভারতের কালচারাল ও ফিনান্সিয়াল, কমার্শিয়াল ও এডুকেশনাল হাব ও আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

Like Facebook Page