প্রেশার ওঠানামা করে? হাইপারটেনশনের রোগলক্ষণ ও প্রতিকার বিষয়ে বিস্তারিত জানুন।

প্রেশার হলো একটি চিরকালীন সমস্যা। এটি দুই প্রকার হয়ে থাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার বা হাইপারটেনশন এবং নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেশার বা হাইপোটেনশন। কারো কম বয়সেই ব্লাড প্রেশার দেখা দেয় আবার কারো বেশি বয়সেও রক্তচাপ স্বাভাবিকই থাকে। মূলত খাদ্যাভাস ও জীবনধারণের জন্য এই রোগের স্বীকার হন মানুষ। আজকের প্রতিবেদনে উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপের কারণ, রোগলক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট রোগের প্রতিকার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

   

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার বা হাইপারটেনশন:-

মানব শরীরে রক্তচাপের স্বাভাবিক পরিমাণ ১২০/৮০। এই পরিমাণ ১৪০/৯০ অতিক্রম করলেই শরীরবিজ্ঞানের ভাষায় রক্তচাপের সেই অবস্থাকে High Blood Pressure বলে। এর আরেক নাম Hypertension।

কারণ:-

উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণই হলো অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও অ-নিয়মমাফিক জীবন-যাপন। সাধারণত মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান, রেডমিট জাতীয় খাদ্যগ্রহণ, খুবই কমমাত্রায় দৈহিক পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে দেখা যায় মানুষকে। এছাড়াও আপনার বংশে যদি কারো এই রোগ থেকে থাকে কিম্বা চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তির এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আরও পড়ুন: ২০২৩ সালের প্রথম দুয়ারে সরকার ক্যাম্প সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ আপডেট।

রোগলক্ষণ:-

হাইপারটেনশনের রোগীদের সাধারণত প্রায়শই মাথা ধরা/মাথা ব্যাথা, বুকের ব্যাথা বা বুকে চাপ অনুভব করা, মানসিক অবসাদ বা ক্লান্তি ও শ্বাসকষ্ট সহ একাধিক রোগলক্ষণ বা উপসর্গ চোখে পড়ে।

প্রতিকার:-

হাইপারটেনশন রোগ থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রেখে লাইফ-স্টাইলে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। যেমন রেডমিটের তুলনায় সবুজ শাক-সবজি জাতীয় ও ভিটামিন সমৃদ্ধ সুষম আহার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি শারিরীক অনুশীলনও করতে হবে। এছাড়া ৩-৬ মাস অন্তর অন্তর ব্লাড প্রেশার ও কোলেস্টেরল লেভেল চেক করাতে হবে। ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিত্যাগ করতে হবে। বীজ জাতীয় খাবার (শিম, বরবটি) উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া দুধ, গাজর, বিটের রস ও হাইপারটেনশনের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।

হঠাৎ প্রেশার বেড়ে গেলে কি করবেন?

হঠাৎ করেই প্রেশার বাড়ার মতো অবস্থা হলে প্রাথমিকভাবে হাই ব্লাড প্রেশারের যে ওষুধ নিয়মিত খান সেটিই খেতে হবে। বেশিরভাগ সময় চিকিৎসকেরা প্রেশার কমানোর জন্য ঘুমের ওষুধ দেন। ঘুমের ওষুধ খেয়ে ৩-৪ দিনের মধ্যে প্রেশার না কমলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেশার বা হাইপোটেনশন:-

ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে (৯০/৬০ বা তার আশেপাশে হলে) তাকে মানববিজ্ঞানের ভাষায় লো ব্লাড প্রেশার বা নিম্ন রক্তচাপ বলে। এর আরেক না হাইপোটেনশন।

কারণ:-

সুষম খাদ্য গ্রহণ না করা, কম পরিমানে লবণ খাওয়া, অতিরিক্ত দৈহিক পরিশ্রমের ফলে পেশি ক্লান্ত হয়ে পড়া লো ব্লাড প্রেশারের মূল কারণ। এছাড়া চিন্তা থেকেও নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে।

রোগলক্ষণ:-

হাইপোটেনশনের প্রধান প্রধান উপসর্গ গুলি হলো মাথা ঘোরা/অজ্ঞান হয়ে পড়া, বমি বমি ভাব, অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্তি ক্লান্তি, অবসাদ, ঘেমে যাওয়া, পাতলা পায়খানা হওয়া, বুক হাস ফাঁস করা, চোখে অন্ধকার ঘনীভূত হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট হওয়া ইত্যাদি।

প্রতিকার:-

লবণ পরিমাণমতো খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। সুষম আহার (শাক-সবজী, ফল, দুধ) গ্রহণ করতে হবে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে দৈহিক পরিশ্রমের পরিমাণ কমাতে হবে। পরিবর্তে ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করতে পারেন। এতে কিছুটা হলেও আরামদায়ক ফল মিলতে পারে।

হঠাৎ প্রেশার কমে গেলে কি করনীয়?

যদি বুঝতে পারেন হঠাৎ প্রেশার কমে গিয়েছে তবে প্রেশারকে স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরিয়ে আনতে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে স্যালাইন করে খেতে/খাওয়াতে পারেন। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা স্যালাইনে চিনি মেশাবেন না। এছাড়াও ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় কিম্বা পুদিনা পাতার রস রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে তাই তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে রোগীকে এগুলো খাওয়াতে পারেন।

দ্রষ্টব্য:- যদি প্রেশার স্বাভাবিক সীমা মানের (৭০ থেকে ১৪০ এর কাছাকাছি) মধ্যে ওঠানামা করে তবে আপনি কিন্তু প্রেশারের রোগী নাও হতে পারে। কখনোই প্রেশার বাড়ায় বা কমায় এমন জিনিস খেয়ে প্রশার মাপবেন না। তাছাড়া প্রেশার মুটামুটি ১৫-২০ মিনিট অন্তর অন্তর তিন বার চেক করার পর যদি সীমা মানের অতিরিক্ত হয় বা নীচে নেমে যায় তবেই তিনি প্রেশারের রোগী বলে গণ্য হবেন। এছাড়া প্রেশার ওষুধ খাওয়ার পর কিম্বা প্রাথমিক চিকিৎসার কিছুক্ষণ পরেও যদি রোগীর স্বাস্থ্যের উন্নতি না হয় তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিকটস্থ একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

Like Facebook Page