পড়াশোনার পাশাপাশি টাকা উপার্জন করতে চাইছেন? রইলো ছাত্র অবস্থায় অর্থ উপার্জনের ৫ টি দারুণ কৌশল।

বর্তমানে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই রয়েছেন যারা পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করছেন বা কিছু করতে চান। অনেকেরই পরিবারের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল না হওয়ার কারণে তারা কিছু একটা করে তাদের পড়াশোনা কে চালিয়ে নিয়ে যেতে চান। যদিও পড়াশোনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বার্ষিক বৃত্তি প্রদান করা হয় তবে বর্তমানে ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে পড়াশোনার পাশাপাশি আনুষঙ্গিক খরচের জন্য সেই টাকা যথেষ্ট নয়। অনেকে আবার পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে অসম প্রতিযোগিতার বাজারে চাকরি না পেয়ে বিভিন্ন রকম কাজ-কর্ম করছেন।

   

তবে বিদেশ ও অধিকাংশ পশ্চিমী দেশগুলোতে শিক্ষার্থীরা খুব অল্পবয়স থেকেই পরিবারের কাছ থেকে দূরে থেকে পড়াশোনা করেন। বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই কলেজ স্তর থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন রকম পার্ট টাইম কাজ করে তাদের নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালিয়ে থাকেন। আজ এই প্রতিবেদনে আলোচনা করবো পড়াশোনার পাশাপাশি কি কি পার্ট টাইম কাজ করে কিছু টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

১) টিউশনি করতে পারেন:-

পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে সহজলভ্য ও দুর্দান্ত উপায় হলো টিউশনি। আপনি যদি ক্লাস 9, 10, 11 বা 12 এ পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আপনার অর্থের প্রয়োজন হয়ে থাকে তবে, নীচু ক্লাসের (1, 2, 3, 4, 5, 6, 7,) বাচ্চাদের প্রাইভেট টিউশন পড়াতে পারেন। এছাড়া আপনি যদি কলেজ স্তরে পাঠরত হন তবে ক্লাস 5 থেকে শুরু করে ক্লাস নাইন ও টেন এবং আপনার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও বিষয়ভিত্তিক পড়াতে পারেন। তবে আপনারও যেহেতু লেখাপড়া রয়েছে তাই প্রথমেই বড় ব্যাচ পড়াতে যাবেন না। প্রথমে একজন, দু’জন বড়জোর তিনজন স্টুডেন্ট কে পড়ান। এতে আপনার পড়াশোনার হাতখরচ উঠে আসবে।

যদি ভাবেন স্টুডেন্ট কোথায় পাবো? তাহলে বলি প্রথমের দিকে স্টুডেন্ট পেতে একটু সমস্যা হবে। এক্ষেত্রে প্রথম প্রথম আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে বলতে পারেন যে আপনি নির্দিষ্ট শ্রেণীর বাচ্চাদের পড়াতে চান। এভাবে কেউ না কেউ আপনাকে খোঁজ দেবে এবং টিউশনির কাজ শুরু করে দিন।

আরও পড়ুনঃ- মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পরে কত শতাংশ নম্বর পেলে এবং পরিবারের বার্ষিক আয় কত হলে কোন স্কলারশিপে আবেদন করতে পারবেন ছাত্র-ছাত্রীরা?

২) ইউটিউব:-

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে উপার্জনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ইউটিউব। YouTube থেকে আয় করতে চাইলে চাইলে ছাত্রাবস্থা থেকেই আপনি ইউটিউব এ ভিডিও কনটেন্ট দেওয়া শুরু করতে পারেন। তবে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করতে চাইলে আপনাকে দীর্ঘ সময় পরিশ্রম দিতে হবে। আপনি যদি ভাবেন দুটো-চারটে ভিডিও দিয়ে আপনি আয় করা শুরু করবেন তাহলে কিন্তু ভুল ভাবছেন। প্রথমের দিকে ভিউজ পেতে একটু সমস্যা হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণ সাবস্ক্রাইবার ও ভিউজ সময় (Views Hours) হলে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে উপার্জন করতে পারবেন আপনি।

আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী সেটা হতে পারে রান্না, ভ্লগ, ট্র্যাভেল ভ্লগ, নাচ, গান, যোগা বা শিক্ষা সংক্রান্ত যে কোনো চ্যানেল খুলেই সংশ্লিষ্ট ক্রাইটেরিয়া সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে আপনি ভালো পরিমাণ টাকা আয় করতে পারেন। আপনি চাইলে ভিডিও রিলস বানিয়ে ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুকে শেয়ার করার মাধ্যমেও প্রচুর টাকা আয় করতে পারেন। আপনার কনটেন্ট এ যদি Impact এবং Fan Base তৈরি করতে পারেন তবে বিভিন্ন কোম্পানির অ্যাড প্রোমোট ও গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমেও বেশ কিছু টাকা রোজগার করতে পারেন। তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে অন্য কারও কপিরাইট ভিডিও বা কোনো সিনেমার গান আপনার আপলোড করা ভিডিয়োয় যাতে না থাকে। সেক্ষেত্রে আপনার চ্যানেলে পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে।

৩) এডিটিং, ভিডিওগ্রাফি ও ফটোগ্রাফি:-

আপনি যদি এডিটিং বা ফটোগ্রাফি ভালো পারেন, তবে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম হিসেবে এই কাজটি করতে পারেন। এমন অনেক বড়ো বড়ো ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে যেখানে ভিডিও এডিট করার জন্য এডিটরের প্রয়োজন হয়। তাই আপনি যদি এডিটিং এর কাজ জানেন তবে এভাবে হাতখরচের টাকা জোগাড় করে ফেলতে পারেন।

এছাড়াও আপনি যদি ভিডিওগ্রাফি ও ফটোগ্রাফি ভালো করতে পারেন তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিয়েবাড়ি বা ফটো শ্যুট এর মাধ্যমেও লেখাপড়ার ফাঁকে বেশ কিছু টাকা আয় করতে পারেন।

৪) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও অ্যাপ রেফারের মাধ্যমে উপার্জন:-

Affiliate Marketing কথাটি শুনতে না যতটা কঠিন, কাজটি করা তার চেয়ে অনেক সহজ। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো আপনি কোনও একটি প্রডাক্ট এর লিঙ্ক হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সেই লিঙ্ক এর মাধ্যমে ভিউ করে উক্ত জিনিসটি কেনার কথা বলুন। আপনি চাইলে অ্যামাজনে মোবাইল বা অন্য কোনো প্রডাক্ট এর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং লিঙ্ক তৈরী করে নিতে পারেন। এভাবে যদি আপনার পরিচিত-অপরিচিতরা ওই লিঙ্কের মাধ্যমে জিনিস কেনে, তবে আপনি কোম্পানির তরফে কমিশন পাবেন।

আরও পড়ুনঃ- পিএম কিষাণের ১৪ তম কিস্তি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপডেট। কবে দেওয়া হবে টাকা?

এছাড়াও এখন বিভিন্ন অ্যাপ (গুগল পে, পেটিএম, ফোনপে) অন্যদের শেয়ারের মাধ্যমেও খুব বেশি না হলেও অল্প কিছু (৫০০-১০০০) টাকা উপার্জন করে নিতে পারেন। যারা উক্ত অ্যাপগুলোতে অ্যাকাউন্ট খোলেননি তাদের ওই অ্যাপ গুলিতে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে রেফারেন্স কোড দিয়ে প্রথম পেমেন্ট করানোর মাধ্যমে অন্তত পক্ষে আপনার প্রতি মাসের মোবাইল রিচার্জের টাকা টুকু জোগাড় করতে পারবেন।

৫) ক্যাটারিং ও অন্যান্য পার্ট টাইম কাজ:-

কোনো কাজই ছোটো নয়। সৎ পথে উপার্জন করা অর্থ যেকোনো মহৎ কাজের সমান। তাই ছাত্রাবস্থায় আপনি চাইলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান (বিয়েবাড়ি, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি) ক্যাটারিং বা এই জাতীয় পার্ট টাইম কাজ করতে পারেন। এতে হয়তো আপনার একটু দৈহিক পরিশ্রম হবে তবে এই কাজ করার মাধ্যমে আপনি বেশ কিছুটা অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। যা দিয়ে আপনার পড়াশোনা ও চলাফেরার যাবতীয় খরচ তুলে নিতে পারবেন।

তাই বন্ধুরা যারা পড়াশোনার পাশাপাশি টাকা উপার্জন করবেন বলে ভাবছেন তারা উক্ত কাজগুলি করতে পারেন। কে কোন কাজ করে কতটা অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। পাশাপাশি তথ্যগুলি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

শিক্ষা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে Google News ও Telegram এ আমাদের ফলো করুন।

গুগল নিউজ:- Link

Telegram Channel:- Link

Like Facebook Page